বার্ধক্য জনসংখ্যা এবং বাংলাদেশ।

 বার্ধক্য জনসংখ্যা কি?

জনসংখ্যার বার্ধক্য হলো একটি জনসংখ্যার একটি ক্রমবর্ধমান মাঝারি বয়স যেখানে ৬০ বা তার অধিক বয়সের জনসংখ্যাকে নির্দেশ করে।যখন কোনো দেশের উর্বরতার হার হ্রাস পায় এবং  গড় আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পায় তখন সেই দেশে বার্ধক্যে জনসংখ্যার সংখ্যা বেশি তা লক্ষ্যনীয়।আর এই অবস্থা তখনই সম্ভব যখন সে দেশের স্বাস্থ্যখাত উন্নত হয়।


ছবিঃ ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত

জনসংখ্যা বার্ধক্য এবং বাংলাদেশ? 

বার্ধক্য শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই নয় এটি পুরো বিশ্বব্যাপী চলমান।বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা এর মতে, ২০১৫ এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ৬০ বছর বয়সী জনসংখ্যার পরিমাণ প্রায় দ্বিগুন হয়ে যাবে, যেটার শতাংশের আকারে ১২% থেকে ২২% এ দাঁড়াবে।উন্নত দেশে বার্ধক্য জনসংখ্যার পরিমান বেশি লক্ষনীয় তার কারন গুলো হলো ডেমোগ্রাফিক ট্রান্সজিশন মডেল এর মাধ্যমে দেখতে পায়, উন্নত দেশ গুলোতে জন্মাহার এবং মৃতূহার সহবস্থান করছে এবং দেশগুলোর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ঋনাত্মক। যার ফলশ্রুতিতে বার্ধক্য জনসংখ্যার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ।  ২০১১ সালের আদমশুমারীতে জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ছিলো ১.৩৭% যা ২০২২ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ১.২২%।এদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমছে যা একদিক দিয়ে ভালো আবার অন্যদিক দিয়ে খারাপ।  কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম এর অর্থ হল দেশটি শেষ পর্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ জনসংখ্যায় রূপান্তরিত হবে।  ভারসাম্যপূর্ণ জনসংখ্যা হল দেশের জনসংখ্যা যেখানে জনসংখ্যা এবং সম্পদের মধ্যে একটি ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে।অন্যদিক থেকে দেখলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস মোটেও ভালো দিক নয় এতে করে একটা সময় কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে আসবে এবং নির্ভরতা জনসংখ্যার অনুপাত বেড়ে যাবে। 
বাংলাদেশের একটি পরিসংখ্যান দেখায় যে 2018 সালে, 60-64 বছর বয়সী পুরুষের সংখ্যা ছিল 1.3% এবং মহিলাদের সংখ্যা 1.1%।  কিন্তু 2022 সালে, 60-64 বছর বয়সী জনসংখ্যার 1.6% পুরুষ এবং 1.5% মহিলা।  যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বাড়তেই থাকবে কারণ দেশটি স্বাস্থ্য খাতে অনেক গুরুত্ব দিচ্ছে, শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাস করছে।  আয়ু বেড়েছে।  ম্যাক্রোট্রেন্ডসের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে গড় আয়ু ৭৩.২৯ বছর।  2021 সালের তুলনায়, 0.39% বৃদ্ধি পেয়েছে।
ছবিটি google থেকে সংগৃহীত
ছবিটিঃ Google থেকে সংগৃহীত। 

বার্ধক্য জনসংখ্যার জন্য কি করা উচিত?

যাইহোক বার্ধক্য নিয়ে অনেক কথায় তো হলো এখন যে বিষয়টা সম্পর্কে আমাদের কর্ণপাত করা উচিত সেটা হলো বার্ধক্য জনসংখ্যার স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিয়ে।উপরের তথ্যগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে এটাই দাঁড়ায় যে বার্ধক্য জনসংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে সেজন্য তাদের প্রতি আমাদের আরো যত্নশীল হওয়া উচিত।
বর্তমানে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার বিপরীতে ২৫% বার্ধক্য জনসংখ্যা বাস করছে।বয়স্ক জনসংখ্যাকে কখনই দেশের জন্য বোঝা হিসাবে বিবেচনা করা উচিত নয় কারণ আজকের বর্তমান তাদের কঠোর পরিশ্রমের উপর নির্মিত। তারা আমাদের সম্পদ এবং গাইড. কারণ তাদের প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তা, চিন্তা চেতনা থেকে আমাদের নতুন প্রজন্মের অনেক কিছু শেখার আছে। সেটা  পরিবারে হোক, সমাজে হোক, দেশে হোক।
আমাদের সমাজে প্রায়ই যে ঘটনাটি ঘটে সেটা হলো সন্তান দ্বারা পিতা মাতা নির্যাতন। যেটা সত্যিই কষ্টজনক। যে পিতামাতা তার সন্তানকে নানা রকম প্রতিকূলতার মধ্যেও সুখে রাখার চেষ্টা করে যায়। নিজের সুখ, আনন্দ বিসর্জন দিয়ে সন্তানের মঙ্গলকামনায় কষ্ট করে তিলে তিলে বড় করে তোলে সেই সন্তানই যখন সেই পিতামাতাকেই নির্যাতন করে তবুও সেই দুঃখী পিতামাতা কখনো অভিশাপ দেয় না। কারন তারা সবসময়ই সন্তানের মঙ্গল চায়,চায় সন্তানের সুখ। 

এজন্যই তো ঈশ্বরী পাটনি বলেছেন "আমার সন্তান যেন থাকে দূধে ভাতে "
আমাদের মনে রাখতে হবে আজকের শিশু যেমন আগামীকালের বৃদ্ধ তেমনি আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আজ তোমার বাবা-মা বৃদ্ধ, কাল তুমিও বৃদ্ধ হবে। আপনি আপনার বৃদ্ধ পিতামাতার সাথে যেমন আচরণ করবেন ঠিক একই আচরণ আপনার সন্তান দ্বারা লাভ করবেন। এখন আপনি ঠিক করুন আপনি কোনটা করবেন পিতামাতা এবং সন্তানের সাথে ভালো নাকি মন্দ।
বৃদ্ধাশ্রম যেটি বয়স্ক লোকদের জন্য কাজ করে থাকে। প্রতিটি  দেশেও এটি বিদ্যমান।একটু কষ্ট হলেও যেন শেষ বয়সে বাবা-মায়ের দেখাশোনা করতে পারি, বা আমার সন্তান এর  খেলার সাথী হিসেবে রাখতেও পারি এতে করেও  তারা খুব খুশি হবে। তারা কি চান? তারা  হেসে, খেলে শেষ জীবনটা কাটিয়ে দিতে চান । এটা কি তাদের জন্য আমাদের কাছে চাওয়া খুব বেশি? না, কখনই না, তারা এটির যোগ্য, এবং আমরা, সন্তান  হিসাবে, অবশ্যই এটি দিবো।

 পৃথিবীর সকল বৃদ্ধ মা বাবা ভালো থাকুক, ভালো থাকুক সেই সকল সন্তান যারা পিতামাতার আনন্দে খুঁজে পায় নিজের আনন্দ।









মন্তব্যসমূহ