নাব্যতা সংকট কি এবং কেন হয়

 নদী মাতৃক দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। কিন্তু শুষ্ক মৌসুম এলেই মনে হয় সব নদী মরে গিয়েছে। যাকে শিক্ষিত ভাষায় বললে বলা হয় নাব্যতা হারিয়ে ফেলেছে। প্রশ্নটা হচ্ছে নদী মাতৃক দেশ হওয়া সত্বেও কেন এই দেশে শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না। চলুন এটা নিয়ে একটু গবেষণা করা যাক।


নাব্যতা সংকট এর চিত্র 

নাব্যতা কি?

নাব্যতা হলো নদীর গভীরতা বা পানি ধারন ক্ষমতা।   নাব্যতা সংকট যেটাকে খাটিঁ বাংলায় মানুষ নদী মরে গিয়েছে বলে থাকে। আমাদের দেশে শীতকাল অর্থ্যাৎ শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি একেবারেই কমে যায়। তার কারনটা হলো এই নাব্যতা সংকট। কেননা নদীর পানি ধারন করার ক্ষমতা না থাকায় পানি শুকিয়ে যায়। নদী  পানি ধরে রাখতে পারে না। 

একটু সহজ করে বললে বুঝা যাবে 

ধরুন আপনার ডান হাতে একটা থালা রয়েছে 

বাম হাতে একটা বড় গামলা বা বাটি রয়েছে। এখন আপনি রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন। কিছু সময় পর কি লক্ষ্য করলে কি দেখতে পারবেন। 

অবশ্যই থালার পানির পরিমান কমে গিয়েছে গামলার তুলনায়। 

এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে গামলার বা বলের জল বেশি ছিলো তাই জল বেশিই রয়েছে থালার তুলনায়। হ্যা এটাই হলো নাব্যতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। 


নাব্যতা সংকট কি?

একটু আগে আমরা যে গামলা আর থালার কাহিনি দেখলাম সেখানে থালার পানি ধারন ক্ষমতা কম। পানিও কম। আর ঠিক তেমনি যখন একটা নদীর গভীরতা কমে যাবে তখন পানি ধারন ক্ষমতাও যাবে। লক্ষ্য করলে দেখবেন বন্যার সময় পানি তীরে উপচে পড়ে 

কারন ধারন ক্ষমতার বেশি ছিলো পানির পরিমান। কিন্তু যদি নদীর গভীরতা আরো বেশি থাকতো তাহলে পানি উপচে পড়ার পরিমাণও কমে যেত।

ফরমাল ভাষায় বলতে গেলে, নাব্যতা একটা নদীর সেই অবস্থাকেই বুঝায় যে অবস্থায় নদী দিয়ে নৌযান নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে। আমরা প্রায়ই খবরে কাগজে দেখতে পারি নাব্যতা সংকটে ভুগছে অমুক নদী,তমুক নদী। শুধু তাই নয় নাব্যতা সংকটের কারনে নদীতে ট্রলার,নৌযান আটকে যায়। 


নাব্যতা সংকটের কারনে নৌযান চলাচলে বিঘ্ন

নাব্যতা সংকট কেন হয়

সাধারণত নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় নাব্যতা সংকট দেখা যায়। এর পিছনেও অনেকগুলো প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ কারন রয়েছে। মূলত নদীর নাব্যতা হারিয়ে ফেলে নিয়মিত ড্রেজিং বা নদী খনন না করার ফলে। কেননা স্রোতের মাধ্যমে নদীতে পলি জমতে জমতে এক সময় অনেক জায়গা দখল করে নেয় ফলস্বরূপ নদী ভরাট হয়ে যায়। পরোক্ষ কারন গুলো বললে বলতে হয় নদী শাসন।এখন নদী থেকে বালু উত্তোলন করা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরিকল্পিত এই বালু উত্তোলন নদীর নাব্যতা সংকটে বিশাল প্রভাব ফেলে। আরো বলতে গেলে বলা যায়, নদীর ভেতর বাঁধ নির্মাণ করার জন্য পরবর্তীতে নদীতে পানি প্রবাহ থমকে যায়। যে কারনে পানি স্রোত থাকে না জল বয়ে আসে না। 

এছাড়াও রয়েছে নদী দূষণ। বর্তমানে নদী দূষণ শুধু নাব্যতা সংকট নয় বরং জনজীবনের জন্য চরম হুমকি।নদীতে অবস্থানরত জীব,উদ্ভিদ সব কিছু বিনষ্টের পথে। বিশেষ করে পানি দূষনের ফলে মাছ নদীতে নেই বললেই চলে। 


নাব্যতা হারিয়ে ফেলা নদী 

নাব্যতা সংকট কিভাবে জনজীবনে প্রভাব ফেলে


 আমরা মাছে ভাতে বাঙ্গালি। কিন্তু যেখানে পানিই নাই সেখানে মাছ আশা করা বিলাসিতা ছাড়া কিছু নয়। একটা সময় নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু তার পরিমাণ এখন খুব কম। কারনটা কি জানেন? কারনটা হলো মানুষের কার্যকলাপ। মনে রাখবেন পরিবেশও প্রতিশোধ নেয়।  আপনি যখন নদীত বাঁধ নির্মাণ করবেন, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করবেন,নদী শাসন করে নদীর বৈশিষ্ট্য ধরে রাখতে বাঁধা দিবেন তখন নদী কি আপনাকে কিছুই করবে না? অবশ্যই করবে।আর ভোক্তভোগী মানুষই হয়। 

 ফলাফলস্বরুপ মাছ পাওয়া যায় না, নদীর পানি দিয়ে এখন ফসল ফলানো যায় না, পণ্য আমদানী, ও রপ্তানি করা যায় না, নৌযান বন্ধ হওয়ার পথে ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। 

 যেগুলো আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাঁধা প্রয়োগ করছে। 

নাব্যতা সংকট হ্রাসে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যাতে পারে 


প্রতিটি বস্তুর খারাপ দিক এবং ভালো দিক দুইটাই রয়েছে। সেটা নির্ভরকরবে মানুষ কোনটা নিতে চায়। 

আপনি যদি পরিবেশকে ভালোটা দেন 

পরিবেশও আপনাকে ভালোটা দিবে। 

একই ভাবে কিছু পদক্ষেপ নিলে নাব্যতা সংকট কাটানো যাবে। যেমনঃ নিয়মিত নির্দিষ্ট সময় পর পর নদী ডিগ ইন বা খনন করতে হবে, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে, নদী শাসন অবসান করতে হবে,অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে নদী দূষণ কমাতে হবে,নদীর প্রতি সদয় হতে হবে। 

তাহলেই নাব্যতা ফিরে আসবে। 


শেষ কথা 

নদী একটা দেশের পরিবেশ,অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রেই অবদান রাখে। নদীর উপর নির্ভর করে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। 

সুতরাং নদী একটি সম্পদ। এই সম্পদ এর  উপযুক্ত ব্যবহার করতে হবে। মনে রাখবেন যদি নদী বাচেঁ তবেই বাচঁবে মাছ 

আর তখনই আমরা হতে পারবো "মাছে ভাতে বাঙ্গালি "

                 নাব্যতা সংকটহীন একটি নদী


মন্তব্যসমূহ