বেঙ্গল ফ্যান কিঃ
প্রথমে দেখেই মনে হয়তো মাথায় ঘুরতে পারে যে বেঙ্গল অর্থ বাংলা এবং ফ্যান অর্থ পাখা। অর্থ দাড়াঁয় বাংলা পাখা। তাহলে আপনি সম্পূর্ণই ভূল ভেবেছেন। তাহলে চলুন এর সম্পর্কে একটু জেনে নিই। বেঙ্গল ফ্যান হচ্ছে সমুদ্র তলের ভূমিরুপ। অর্থ্যাৎ ভূমির মতো বা ভূমি যেটা সমুদ্রতলে অবস্থিত। সমুদ্র তলদেশে একটি ভূমিরুপকেই "বেঙ্গল ফ্যান" বলা হয়।
![]() |
| ছবিটি গুগল থেকে সংগৃহীত |
বেঙ্গল ফ্যান এর গঠন বা উপদানঃ
আমরা জেনেছি বেঙ্গল ফ্যান সমুদ্র তলদেশের একটি ভূমিরুপ। মূলত "বেঙ্গল ফ্যান" গঠিত হয় নদীবাহিত পলি দ্বারা। অর্থ্যাৎ নদীর মাধ্যমে প্রবাহিত পলি জমে সমুদ্র তলদেশে গিয়ে এটি গঠিত হয়। আর পলিগুলো শুধু গঠনই হয় এমন না পলিগুলো শিরা উপশিরা মিলে জালের ন্যায় বলয় তৈরি করে। ফলে বিশাল আকৃতির পাহাড় এর মতো তৈরি হয় সমুদ্র তলদেশে।
বাংলাদেশে অবস্থিত বেঙ্গল ফ্যানঃ
পৃথিবীতে ছোট বড় মিলিয়ে অনেক সাগর মহাসাগর উপসাগর রয়েছে। কিন্তু বেঙ্গল ফ্যান শুধু মাত্র বাংলাদেশে অবস্থিত। পৃথিবীর অন্য কোনো সাগর বা মহাসাগরে এটি নেই। বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরে এর অবস্থান। নদীমাতৃক দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ । বাংলাদেশে শাখা প্রশাখা সহ ৪০৫ টির বেশি নদী রয়েছে। প্রধান প্রধান নদী গুলো হলো পদ্মা,মেঘনা,যমুনা,ব্রহ্মপুত্র৷। একেকটা নদীর দৈর্ঘ্য হিসেব করলে শুধু জলরাশিই চোখে পড়বে। সাথে তো পলি রয়েছে। একটা বার চিন্তা করুন এত এতগুলো নদীর পলি গুলো কোথায় যায়। মনে প্রশ্ন আসতেই পারে। হ্যা উত্তরও রয়েছে। যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয় নদীর জল প্রবাহিত হয়ে কোথায় যায় আপনি অবশ্যই বলবেন সাগরে। হ্যা তাই সঠিক বলেছেন, তাহলে পলি কোথায় যায়? অবশ্যই বলবেন সাগরে। হ্যা পানির সাথে পলিও যায় তবে পলি সেই বেগে না প্রবাহিত না হলেও কম গতিতে হলেও প্রবাহিত হয়। এখন সাগর থেকে পলি আর কোথাও যাওয়ার রাস্তা নেই। আছে কি? নেই সুতরাং পলিরাশি সমুদ্রের মধ্যে জড়ো হতে হতে দানবাকৃতির পাহাড় এর মতো তৈরি হয়। যেটাই হচ্ছে "বেঙ্গল ফ্যান "।
বেঙ্গল ফ্যান বা গঙ্গা ফ্যান, গাঙ্গেয় উপদ্বীপঃ
বেঙ্গল ফ্যান, গঙ্গা ফ্যান, গাঙ্গেয় উপদ্বীপ,বঙ্গীয় উপদ্বীপ এ নামগুলো সব একই বস্তুকে বোঝায়। যা ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। এসব গুলোকে আমরা গভীর সমুদ্রের গিরিখাতও বলতে পারি এবং হ্যা পৃথিবীর গভীরতম গহীন সমুদ্র গিরিখাত এটি। আয়তনের কথা বলতে গেলে এ গিরিখাতটির দৈর্ঘ্য ৩০০০ কি.মি (১৯০০ মাইল) এবং প্রস্থ ১৪৩০ কি.মি (৮৯০ মাইল)। গভীরতা ১৬.৫ কি.মি ( ১০.৩ মাইল) এই খাতটি তৈরির পিছনে তিনটি প্লেট ভূমিকা রেখেছে। সেগুলো হলো তিব্বতি প্লেট, ভারতীয় প্লেট, ইউরেশিয়ান প্লেট।এই খাতটি তৈরি হয় তিনটি প্লেট অর্থ্যাৎ তিমুখী সংঘর্ষের ফলে। তিব্বতি প্লেটটি ইউরেশিয়ান এবং ভারতীয় প্লেট দুটিকে আঘাত করে হিমালয় পর্বতের উত্থান এবং ক্ষয় এর মাধ্যমে খাতটি গঠিত হয়। টার্বিডিটি হলো স্রোত আর এই স্রোতগুলো সাবমেরিন ক্যানিয়নের এর মাত্র একটি সিরিজ বা ধারার মাধ্যমে পলি বহন করে আসছে। যা বঙ্গোপসাগরের ৩০° অক্ষাংশ পর্যন্ত পলি সঞ্চয় হয়।গবেষকরা নিশ্চিত হয়েছে যে বেঙ্গল ফ্যান এর প্রাচীনতম পলিগুলি মায়োসিন যুগের প্রথম দিকে। সুতরাং বুঝতেই পারছি কতটা পুরোনো এই পলিগুলো।
বেঙ্গল ফ্যান এবং হিমালয়ের সম্পর্কঃ
বেঙ্গল ফ্যান, গাঙ্গেয় উপদ্বীপ, গঙ্গা ফ্যান সবগুলোর সাথে হিমালয় এর নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। গিরিখাতটির খনিজ এবং ভূগর্ভস্থ রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যগুলোর মাধ্যমে হিমালয় এর উৎপত্তি সনাক্ত করতে পারি। ফলাফল স্বরুপ বলা যায় হিমালয় প্রায় ২০ মিলিয়ন বছর আগেও একটি মাত্র পর্বতশ্রেনী ছিলো যা আজকে একটা বিশালেরও বিশাল উচ্চতা বিশিষ্ট অবয়ব।
বেঙ্গল ফ্যান সনাক্তকরণঃ
বেঙ্গল ফ্যান নিজে নিজেই সনাক্ত হয় নি। এর পিছনে রয়েছে মানুষের হাত। ৬০ এর দশকে দুইজন সমুদ্র গবেষক ব্রুস সি.হিজেন এবং মারি থার্প একটি জরিপ চালায় যার নাম ছিলো বাথিমেট্রিক। বাথিমেট্রিক দ্বারা তারা দেখতে পায় খাতটি শঙ্কু আকৃতির।
১৯৬৮ সালে জোসেফ কুরে এবং ডেভিড মুর এই দুই ভূতাত্ত্বিক একটি জরিপের মাধ্যমে নাম দেন বেঙ্গল ফ্যান। যা আমরা এখন এসে পড়তেছি এবং জানতেছি। বেঙ্গল ফ্যান সমুদ্রের উদ্ভিদ ও জীবের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
শেষ কথাঃ
"বেঙ্গল ফ্যান" বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বস্তু যদিও এটি গভীর সমুদ্রে অবস্থিত। এই খাতকে কেন্দ্রের করে নানা রকমের সামুদ্রিক প্রাণী টিকে আছে। খাতটির পাশেই রয়েছে "সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড"।যা বঙ্গোপসাগরের গভীরে অবস্থিত। সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড একটি স্থান যা অতি নিচু ভূমি দ্বারা পরিলক্ষিত হয়।




মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন