ভয়ংকর মৃত্যূপুরীর নাম "হাল্ফ ডোম"

 

হাল্ফ ডোমের শৃঙ্গের দৃশ্য

পাহাড়/টিলায় তো সবারই ভালো লাগে উঠতে। কিন্তু এমন কোনো পাহাড়ের ঘটনা জানেন যেখানে উঠতে আপনাকে আগে থেকে টিকেট বুক করে রাখতে হয়। শুধু টিকেট বুক করাই না তার সাথে লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করা হয় কারা চড়তে পারবে পাহাড়ের টিলায়। শুনে অবাক হলেন তাই। অবাক হওয়ারই কথা। কারন এটা কোনো সাধারণ কোনো পাহাড় নয়। যেখানে রয়েছে মৃত্যুর হাতছানি। আপনি যদি পাহাড় প্রেমী হয়ে থাকেন তাহলে এই বল্গটি আপনার জন্য। 


হাল্ফ ডোম কিঃ

পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর একটি পর্যটন কেন্দ্র হলো এই " হাল্ফ ডোম"।এখানে পর্যটকরা পাহাড়ে উঠতে বেশি পছন্দ করেন তাই তারা সকল প্রকার প্রস্তুতি নিয়ে সেখানে উঠেন। কারন তারা সকলেই হাইকার বা পাহাড়ভ্রমণকারী। হাফ ডোম এর মতো এমন কোনো পাহাড় খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে এত প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্বেও ভ্রমণপিপাসুরা বিন্দু মাত্র তোয়াক্কা করে না। তাহলে এক কথায় বলতে পারি হাফ ডোম একটি দীর্ঘ উচ্চতা বিশিষ্ট পাহাড় বা টিলা। 

হাফ ডোম শৃঙ্গের ছবি 

হাল্ফ ডোমের বৈশিষ্ট্যঃ

আমরা আগেই জেনেছি হাফ ডোম ভয়ংকর একটি পাহাড় বা পর্বতশৃঙ্গ। দূর থেকে মনে হবে এটি একটি মোটাআকৃতির পিলার। যেটাকে পর্যটকদের আনন্দ দেয়ার জন্য স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভ্রম।  এটি একটি বিশালাকৃতির প্রাকৃতিক গ্রানাইট সম্বলিত পর্বত। পর্বতটির একদিক নিখুঁত মুখ এবং বাকি তিনদিক মসৃণ ও গোলাকার যা দেখতে গম্বুজ আকৃতির মতো লাগে।  উক্ত পর্বতটির উচ্চতা ১৫০০ মিটার যা প্রায় ৫০০০ ফিট। পাহাড়টি একবার পাড়ি দিতে সময় লাগে ৯ ঘন্টা ৪০ মিনিট। কোনো হাইক গাইডের হিসেব মতে এটার দৈর্ঘ্য ১৬ মাইল। যা কি না দিনের শুরু থেকে সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত। দিনের পুরো ভাগটাই চলে যায় এখানে উঠতে। হাল্ফ ডোম  টি খোলা হয় মে এর শেষের দিক থেকে অক্টোবরের শুরুতে। কারন তখন বরফ পড়তে থাকে। ভ্রমনপিপাসুদের আনন্দ আরো বাড়িয়ে দেয়। 

দূর থেকে হাফ ডোম

হাল্ফ ডোমের অবস্থানঃ

হাল্ফ ডোম কি এবং হাফ ডোমের বৈশিষ্ট্য কি জানা হলো কিন্তু হাল্ফ ডোমের অবস্থান কোথায় এটা জানা হলো না। চলুন এটার অবস্থান সম্পর্কে একটু জেনে নেয়া যাক। গ্রানাইট পদার্থের এই পর্বতটি আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত। যা বর্তমানে ইয়োসেমাইট ভ্যালির যেটা ইয়োসেমাইট ন্যাশনাল পার্কের শেষ ভাগে অবস্থান করছে। 


হাল্ফ ডোমকে ঘিরে পর্বত আরোহীদের কৌতূহলঃ

প্রতিবছর মে এর শেষ থেকে অক্টোবর মাসে হাইকাররা ভিড় জমায় ইয়োসেমাইট ভ্যালিতে। তারা অনেক আগে থেকেই রিজার্বেশন নিয়ে রাখে সেখানে উঠার। কারন সেখানে এত পরিমান পর্বত আরোহী ভিড় জমায়। পার্কের কর্মকর্তারা পর্যাপ্ত সুবিধা দিতে পারে না। তাই তারা লটারী সিষ্টেম করে আরোহী নির্ধারন করে থাকে। এমন হয় আরোহীরা প্রায় ৩-৪ মাস আগে থেকে রিজার্বেশন দিয়ে রাখে। প্রতিটি রিজারবেশনের জন্য অফেরতযোগ্য একটি ফি নেয়। সেটা ১০ ডলার। তবে অক্টোবর বা তার পরে পর্বতআরোহীরা কিছুটা অনুৎসাহী হয়ে পড়ে। তার কারন সাধারণত ক্যালিফোর্নিয়ার অক্টোবর বা নভেম্বরে তুষারপাত হয়। তখন যাত্রা পথ মসৃণ থাকে না। উচ্চতা এবং মেঘলা আকাশের জন্য তারা ভয় পায়। শুধু তাই হাফ ডোমের অনেক অংশ্যই থাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন। তখন অনেকেই নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হয়  ফলে অনেকেই নানারকম  দূর্ঘটনার শিকার হয়। অনেকে মৃত্যূবরণ করেন। এখন পর্যন্ত হাল্ফ ডোমে ৬০ জন মৃত্যূবরণ করেছেন।যেটি সত্যিই ভ্রমণপিয়াসীদের জন্য অনেক কষ্টদায়ক। কিন্তু তারপরও হাইকাররা থেমে নেই। 

আরোহণরত হাফডোম আরোহী 

হাল্ফ ডোমে আরহন করতে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারেঃ


বর্তমানে  ইয়োসেমাইট ন্যাশনাল পার্কের অধীনে অনেক হাইক চালু রয়েছে।  এতে তারা পর্যাপ্ত সুরক্ষা এবং দিক নির্দেশনা পেয়ে থাকেন। ১২০ মিটার প্রায় ৪০০  ফুট চড়ার জন্য পার্ক কর্তৃপক্ষ মেটাল ক্যাবল এর ব্যবস্থা করেন এবং সাথে আরামদায়ক গ্লাভস দিয়ে থাকেন৷ যাতে করে আরোহীরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারে। তাদের সাহায্যের পাশাপাশি নিজেদেরও সর্তক থাকার বিষয়ে ধারনা নেয়া দরকার। যেমন ব্যাগে পর্যাপ্ত পরিমান জল বা খাবার,ট্যাবলেট, যেহুতু অনেকাংশ অন্ধকার তাই চাইলে আলোর ব্যাবস্থা রাখাটাও গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও অবস্থা বুঝে ব্যাবস্থা নেয়াটা দরকার।উল্লেখ্য যে মেটাল ক্যাবল টি তুষারের কারনে পিচ্ছিল হয়ে যায় এতে ঝুঁকি থেকে যায়। শুধু তাই নয় যদি একটু এদিকসেদিক হয় তাহলেই বিপদ অবধারিত। কারন মেটাল ক্যাবলের নিচেই রয়েছে মৃত্যূধাম ভার্নাল জলপ্রপাত। যেখানে পড়লে আর রক্ষা নেই। আরেকটা কথা হলো পার্কের ৬০ ভাগ উদ্বারকর্মী ব্যস্তই থাকেন বিপদগ্রস্থ আরোহীদের সাহায্য বা উদ্ধার করার জন্য। তাহলে একবার ভাবুন কতটা ভয়ংকর এই হাল্ফ ডোম । 

শেষ কথাঃ

মানুষের জানার কৌতূহল হল থেকেই উঠে আসে প্রশ্ন। মানুষ জানে বিপদ কিন্তু সেখানে তার প্রশ্ন থেকে যায় কি, কেন,কেমন,ইত্যাদি। আর এই সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্যই মানুষ ভয়ংকর স্থান হওয়া সত্বেও সে জায়গাগুলোতে যায়। 

আপনি ঠিক করুন আপনি কি করবেন। 

ভাবনাটা আপনার কারন জীবনটাও আপনার। 

না হয় একবার ঘুরেই আসুন হাল্ফ ডোম। 

মন্তব্যসমূহ