পেলিন্ড্রোম কাব্য কি

 নামটা শুনেই সম্পূর্ণ পড়ার মোডটাই চলে যাচ্ছে তাই না। একটু ধৈর্য ধরেন পড়েন অনেক কিছু জানতে পারবেন। 



ইংরেজি পেলিন্ড্রোম শব্দসমাহার


পেলিন্ড্রোম কি? 

পেলিন্ড্রোম শব্দটি গ্রীক শব্দ "প্যালিনড্রোমাস" শব্দটি  থেকে আসছে (যার  অর্থ "আবার দৌড়ে ফিরে")এবং ইংরেজি শব্দ "Palindrome" যার অর্থ হলো এমন কিছু শব্দ বা সংখ্যা। যে শব্দ বা সংখ্যার সামনের দিক এবং পিছন দিক থেকে উক্ত সংখ্যা এবং শব্দ একই অর্থ এবং উচ্চারণ একই থাকে। কি একটু বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে চলুন আরেকটু সহজ করে বুঝিয়ে দেয়। 

ধরুন একটি ট্রেনের মাথা দুইদিকে থাকে। যাতে ট্রেন দুইদিকেই যেতে পারে খুব সহজেই। যদি কল্পনা করেন ট্রেন পেলিন্ড্রোম  শব্দ। এর কার্যক্রম দুইদিক থেকেই সম্ভব এবং সেখানে ট্রেনের কোনো কিছুই পরিবর্তন করা লাগে না। 

বাংলা ভাষায় পেলিন্ড্রোমকে দিমুখী, উভয়দিক। 


পেলিন্ড্রোম এর ব্যবহার 

গ্রীক কবি সোতাদেস খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে সর্বপ্রথম পেলিন্ড্রোম কবিতা রচনা করেন। 

আমরা ইতোমধ্যে জেনে গিয়েছি পেলিন্ড্রোম কি। পেলিড্রোম শুধু কাব্যে ব্যবহৃত হয় এমন না। এই শব্দটি বাংলা,ইংরেজি, গনিত,সাহিত্য সব ক্ষেত্রেই যায়। যেগুলো আমরা আলাদা আলাদা ভাবে জানতে পারবো। 



** বাংলা ভাষায় পেলিন্ড্রোম 

পেলিন্ড্রোম এর ব্যবহার বাংলা ভাষায়ও পাওয়া যায়। 

পেলিন্ড্রোমিক লেখা প্রাচীন কাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এরকম একটি বাক্য হলো "সারস নয়না ঘন অঘ নারচিত রতার কলিক হর সার রসাসার রসাহর কলিকর তারত চিরনাঘ অনঘ নায়ন সারস "

কি বুঝতে পারলেন কিছু? 

চলুন বুঝিয়ে দেয়। 

লক্ষ্য করুন এই শব্দ গুলোতে: সারস,নয়না ঘন+অ, অঘ, রতার,কলিক রসাসার কলিক,তারত, নায়ন, সারস। উক্ত শব্দগুলোতে পূর্বের ন্যায় পরেও একই বর্ণ বিদ্যমান। যা শব্দে অবস্থান করছে। চতুর্দশ শতকে দৈবজ্ঞ সূর্যপন্ডিত যার লেখা কাব্যের নাম ছিলো "রামকৃষ্ণ বিলম কাব্যম"যেখানে ৪০ টি শ্লোক খুবই অদ্ভুত পেলিন্ড্রোমে লেখা। শুধু কি তাই তার কবিতাগুলো সামনে থেকে পড়লে রাময়ণের কাহিনি এবং পিছন থেকে পড়লে মহাভারতের কাহিনি পড়া হয়ে যাবে। একটা বার কল্পনা করুন মানুষ কতটা পন্ডিত হলে এইরকম কাব্য সৃষ্টি করতে পারে। বাংলায় পেলিন্ড্রোম শব্দ অনেক থাকলেও বাংলা রচনা করা অনেক কঠিন কারন বাংলা ভাষায় অনেক প্রকার যুক্তবর্ণ থাকে।এজন্য বাংলা পেলিন্ড্রোম বাক্য খুবই বিরল। তবুও আছে নেই যে এমন নয়। 

--বাংলায় দুই অক্ষরের পেলিন্ড্রোম শব্দঃ চাচা,মামা,বাবা,চিচি,জুজু,নানা,ঝিঝি,ইত্যাদি।

--তিন অক্ষরের শব্দ হলোঃ কালিকা,মরম,মলম,দরদ,জলজ,যমজ,তফাত, মাধ্যম, বাহবা,চামচা,সমাস,সন্ত্রাস ইত্যাদি। 

--চার শব্দ বা ততোধিক শব্দে গঠিত বাংলা পেলিন্ড্রোমঃ বনমানব,নবজীবন ইত্যাদি। 

বেশ কিছু নামও রয়েছে যেমন,রমাকান্ত কামার,সুবললাল বসু, সদানন দাস,রায়মনি ময়রা ইত্যাদি। 

বাংলায় কিছু বাক্যঃ বই চাইব, তুমি কি মিতু, বিকল্প কবি,ঘুরবে রঘু, সীমার মাসি, ইভার ভাই, নাম লেখালেম না, নব ভূলে চলে ভূবন, থাক বসন্তে সব কথা ইত্যাদি। তরুন একজন প্যালিন্ড্রোমিস্ট (অর্থ্যাৎ যারা পেলিন্ড্রোম শব্দ তৈরি করে তাদেরকে বুঝিয়ে থাকে) যিনি প্যালিন্ড্রোমের ভাষায় পেলিন্ড্রোমের সজ্ঞা দিয়েছেন। তার সজ্ঞাটি এমনঃ ইহা উল্টে পাল্টে উহাই। 

*** বাংলা সাহিত্য পেলিন্ড্রোম 

প্রথমেই যার কথা মাথায় আসবে তিনি হলেন শরৎচন্দ্র পন্ডিত যারা উপাধি দাদাঠাকুর নামে। 

তার সম্পর্কে বলতে গেলে তিনি নিজেই পেলিন্ড্রোমের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তার জন্ম জয় ১৮৮১ সালে এটা একটা পেলিন্ড্রোম সংখ্যা।তার জন্ম তারিখ ১৩ বৈশাখ, যা সংখ্যায় লিখলে ১৩/১ হয়। 

যেটাও পেলিন্ড্রোম সংখ্যা।তিনি বিদূষক পত্রিকায় পেলিন্ড্রোম নিয়ে লিখতেন। 

তার কিছু লাইনঃ কাক কাদেঁ কা কা, চেনা সে ছেলে বলেছে সে নাচে, 

"রাধা নাচে অচেনা ধারা

রাজন্যগণ তরঙ্গরত, নগণ্য জরা

কীলক-সঙ্গ নয়নঙ্গ সকল কী?

কীর্তন মঞ্চ ‘পরে পঞ্চম নর্তকী"

বাংলা সাহিত্যে প্রথম পেলিন্ড্রোম বই লিখেন কিশোরগঞ্জের  ফরিদ উদ্দিন। যার পেশা একজন নিরাপত্তা প্রহরী। 

তার প্রকাশিত বই হলো "কথা থাক'',নব-যৌবন,নব -প্লাবন(কবিতার বই)।বাংলা সাহিত্যের প্রকাশিত প্রথম পেলিন্ড্রোম পত্রিকা হলো, "নবভূবন"যেটি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার পত্রিকা। 

পশ্চিমবঙ্গ প্যালিনড্রোম পরিষদ(প-প্যা-প)' নামে সংগঠন তৈরি করেছেন।

ইংরেজি সাহিত্যের পেলিন্ড্রোম 

ইংরেজি সাহিত্যে পেলিন্ড্রোম শব্দ প্রাচীনকাল থেকেই পাওয়া যায়। সর্বপ্রথম ১৬১৪ সালে জন টেইলর " Lewd did i live & evil I did dewd."লিখেন। 

আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে ইংরেজি সাহিত্যে দুটি উপন্যাস সম্পূর্ণ পেলিন্ড্রোম শব্দ দিয়ে লেখা। 

প্রথমটা হলো "Satire:veritas" 1980 লেখক হলেন  ডেভিড স্টিফেন। বর্ণ সংখ্যা ৫৮৭৯৫।

পরেরটি উপন্যাসটি  লিখেছেন Lawrence Levin যেটির নাম ছিলো "Dr -Awkward and olson in oslo"

গনিতে পেলিন্ড্রোম সংখ্যা 

গনিতে পেলিন্ড্রোম সংখ্যার কোনো অন্ত নেই। কারন আপনি চাইলে অনেক পরিমান সংখ্যা তৈরি করতে পারবেন। যেমনঃ১১১১,২২২২২,৩৩৩৩,

২৪৪২,৪৫৫৪ ইত্যাদি। 


পরিশেষে বলা যায় যে,পেলিন্ড্রোম কাব্য মূলত তেমনই এক কাব্য যেখানে কাব্যের বা কবিতার শুরু এবং শেষের শব্দের অর্থ এবং উচ্চারণ একই হয়ে থাকে। 

মন্তব্যসমূহ