ক্রিপ্টোকারেন্সি বা গুপ্তমুদ্রা

 

বিভিন্ন গুপ্ত মুদ্রা  

ক্রিপ্টোকারেন্সি বা গুপ্ত মুদ্রা কি?

 বর্তমানে অনলাইন জগতে বড় একটি অনুপাত ক্রিপ্টোকারেন্সির সাথে সম্পৃক্ত। অনলাইন তথ্য বা পরিচয় গোপন রেখে এই মুদ্রার আদান প্রদান করা যায়। 

 শাব্দিক অর্থ বিশ্লেষণ করলে "Crypto" শব্দের অর্থ গোপন বা চোরা এবং "Currency" মুদ্রা। অর্থ্যাৎ Cryptocurrency শব্দের অর্থ গোপন মু্দ্রা।  আমরা জানি সেসব বিষয়গুলোকেই গোপন রাখা যায় যেগুলো অপর কেউ জানলে আমাদের ক্ষতিসাধন হতে পারে।  জেনে অবাক হবেন যে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন এ কোনো প্রকার তৃতীয় ব্যাক্তির সম্পৃক্ততা নেই।  মূলত বাইনারী কোডিং থেকে এর জন্ম হয়েছে। যা বিনিময় হিসেবে কাজ করে থাকে। 


ক্রিপ্টোকারেন্সি বা গুপ্তমুদ্রার ইতিহাস

এটি তৈরি হয় মার্কিন এক নাগরিক এর চিন্তা থেকে। তিনি পরিকল্পনা করতেন কিভাবে ডিজিটাল উপায়ে টাকা লেনদেন করা যায়। তিনি ছিলেন একজন গুপ্তলেখক।তার গুপ্তলেখকের অভিজ্ঞতা থেকে ১৯৮৩ সালে ডেবিড চৌম ই ক্যাশ নামে অনলাইন মুদ্রা সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করেন। যেই কথা সেই কাজ তিনি ১৯৯৫ সালে তার বৈদ্যুতিক বিল পরিশোধ করার জন্য মানুষ যে ডিজি ক্যাশ ব্যাবহার করে সেটাতে তিনি প্রাথমিক ভাবে এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে লাগেন। পরে তিনি যা দেখতে পান যে সেখানে কোনো দেশের প্রচলিত মুদ্রা না। সেখানে পয়েন্ট যুক্ত হয়েছে। তবে এখানেই থেমে নেই, সাতোশি নাকামাতো  (কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যাক্তির নামে) সফলভাবে কেন্দ্রীয়নিয়ন্ত্রকবিহীন ডিজিটাল পদ্ধতিতে অর্থ পরিশোধ করার ব্যবস্থা চালু করেন। যা বিটকয়েন নামে পরিচিত। 


ক্রিপ্টো কারেন্সির ব্যবহারের উদাহরণ 

আমরা প্রায়ই অনলাইনে বিভিন্ন এপ বা সফটওয়ার এর মধ্যে দেখি ক্লিক করলেই পয়েন্ট পাওয়া যায়,রেফার করলেও পয়েন্ট পাওয়া যায়। যেমন মাইজিপি বা বাংলালিংক এপে অনেক সময় এই পয়েন্ট দিয়ে অনেক প্যাক কিনা যায়। এই যে পয়েন্ট সংগ্রহ করলেন এটা হলো গুপ্ত মুদ্রা। আর সংগ্রহ করলেন পয়েন্ট কিন্তু টাকা ছাড়াই পেয়ে গেলেন প্যাক। সুতরাং আপনার মুল্যটি পরিশোধ করে দিলো পয়েন্ট যা এসব ভার্চুয়াল মু্দ্রা দিয়ে থাকে। 


গুপ্তমুদ্রার প্রকার ভেদ

গুপ্তমুদ্রা কত ধরনের তা বলতে গেলে অনেক নামই বলতে হবে। কিন্তু তারমধ্যে যেগুলো গুপ্তমুদ্রা গুলো বেশি জনপ্রিয় সেগুলো উল্লেখ করা হলো। যেমনঃ বিটকয়েন,ইথেরিয়াম,টেথার,বিএনবি,ইউএসডি কয়েন,এক্সআরপি, লাইটকয়েন,রিপল, মনেরো,ড্যাস,বাইটকয়েন,ডোজ কয়েন ইত্যাদি। 

উপরোক্ত গুপ্তমুদ্রাগুলোর মধ্যে বিটকয়েন পূর্বসরী এবং বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। মূলত বিটকয়েন এর সাথে প্রতিযোগিতা করার জন্যই বাকি মুদ্রা গুলো তৈরি হয়েছে। 


ক্রিপ্টোকারেন্সি কিভাবে কাজ করে

আমরা আগেই জেনেছি গুপ্ত বা ভার্চুয়াল মুদ্রায় তৃতীয়পক্ষের কোনো সম্পর্ক নেই। 

এটি কাজ করে তিনটি পদ্ধতিতে। 

প্রথমত, নিজের ওয়ালেট বা একাউন্ট। প্রাপক এবং প্রেরক উভয়ই নিজের ওয়ালেট এর মাধ্যমে অর্থ বা মুদ্রা গ্রহন এবং প্রেরন করতে পারে। এই পদ্ধতির জন্য নির্দিষ্ট একটি এনক্রিপ্টেট ডাটা বা তথ্য থাকে। 

দ্বিতীয়ত,  ব্লকচেইন নামে একটি পদ্ধতি রয়েছে। যেটা কিনা সমস্ত ডাটা সংরক্ষণের কাজ করে এবং পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে এাব তথ্য দেখতে পারবেন। 

তৃতীয় এবং সর্বশেষ, ব্লকচেনে জমা থাকা তথ্য ঠিক আছে কি না তা দেখার কাজ করে এই ধাপ। যার নাম খনন। যারা এই কাজটি করে তাদের বলা হয় খননকারী বা মাইনিং। সহজ ভাষা বলতে গেলে ট্রেনের টিকিট যারা চেক করে তাদেরকে বুঝায়। তাদেরও কাজ এটাই চেক করা।

ক্রিপ্টোকারেন্সির বৈশিষ্ট্য

১.অনলাইন পদ্মতি হওয়ায় অতি দ্রুত লেনদেন করা যায়। 

২.কারোর অর্থ  অন্য কেউ দাবী করতে পারে না। 

৩.নিরাপত্তা থাকে। 

৪.নাম পরিচয় গোপন রেখেই একজন ব্যাক্তি একাধিক একাউন্ট খুলতে পারে। 

৫.ব্লক চেইন পদ্ধতির জন্য পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে নিজ একাউন্ট চেক করা যায়। তাই দূর্নীতির কোনো অবকাশ নেই। 

৬.তবে অসুুবিধা ভূল ঠিকানায় অর্থ গেলে আর ফেরতপাওয়া যায় না।


 গুপ্তমুদ্রার জনপ্রিয়তাঃ

 বর্তামানে বিভিন্ন প্রতিষ্টান বিটকয়েন নিয়ে সেবা প্রদান করে থাকে। অর্থ্যাৎ ধীরে ধীরে ভার্চুয়াল মুদ্রার ব্যবস্থা বেড়ে যাবে। উইকিপিডিয়া,ওয়ার্ডপ্রেস,মাইক্রোসফট এর মতো বড় বড় কোম্পানিগুলো বিটকয়েন গ্রহন করে থাকে।  সুতরাং এটাতেই বুঝা যায় বিটকয়েন কতটা জনপ্রিয় হচ্ছে। 

বাংলাদেশে বিটকয়েনের প্রবেশ

২০১৪ সালে ১৫ আগষ্ট এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে  বাংলাদেশ বিটকয়েন ফাউন্ডেশনে যুক্ত হয়। যদিও বাংলাদেশ সরকার বিটকয়েনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে। 


গুপ্তমুদ্রার চিন্তার বিষয়

গুপ্ত মুদ্রার যেমন ভালো দিক রয়েছে তেমন খারাপ দিকও রয়েছে। কেননা গুপ্ত মুদ্রার নেই কোনো সংরক্ষণাগার তাই কম্পিউটার ক্রাশের মাধ্যমে তথ্য উপাত্ত হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু তাই নয় রয়েছে হ্যাকিং এবং ম্যালওয়ার আক্রমন হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

শেষ কথা 

পরিশেষে এটাই বলা যায় দিন দিন ভার্চুয়াল মুদ্রার ব্যবহার যে ভাবে বেড়ে চলছে। কোনো একদিন শোনা যাবে কাগজের মুদ্রার আর কোনো মুল্য নেই।  

মন্তব্যসমূহ