পেঁয়াজের সাথে চোখের জলের কি সম্পর্ক


পেয়াঁজ কাটায় চোখের জল 

পেঁয়াজ একটি উদ্ভিদ। আমরা হয়তো অনেকেই একে সবজি বলে ভূল করে থাকি। আমাদের দৈনন্দিন সকল খাবার প্রস্তুত করতে পেঁয়াজ একটি গুরু দায়িত্ব পালন করে। পেয়াঁজ ছাড়া মনে হয় তরকারী স্বাদই আসে না। এটি হলো অ্যালিয়াম গোত্রের উদ্ভিদ। পেঁয়াজ রসুন প্রায় একই গোত্রের। তাই এই দুটিকে মাশতুতো ভাই বলতেই পারি। 


পেঁয়াজ কাটার সময় চোখে পানি আসার কারন 

পেয়াঁজ কাটলে চোখে পানি আসা এ যেন নিয়মিত এবং সাধারণ ঘটনা। তাই বলবো যে পেয়াঁজ মানুষের চোখে পানিই নিয়ে আসতে পারবে না সেটা কোনো পেয়াঁজই না। যাই হোক একটু মজার ছলেই বললাম আমরা সবাই জানি রাসায়নিক বিক্রিয়ার কারনে আমাদের চারপাশে, জীব, উদ্ভিদ দেহে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বিশেষকরে ভেজস উদ্ভিদগুলো বেশি কার্যকরি। বলতে গেলে পেয়াঁজও এক প্রকার ভেজস উদ্ভিদ।পেয়াঁজ কাটার সময় আমরা লক্ষ্য করে থাকি পেয়াঁজের কোষগুলো একটা আকার বা রাউন্ড শেপ এ থাকে। যখন পেয়াঁজ কাটা হয় তখন সেই কোষগুলো একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে যায়। আলাদা হওয়ার কারনে এর ভিতরে থাকা এনজাইমগুলো বেরিয়ে আসে এবং এনজাইমগুলো সালফোক্সাইডের সাথে বিক্রিয়া করে। অর্থ্যাৎ এনজাইমগুলো বিক্রিয়ার মাধ্যমে সালফেনিক এসিড নামে এসিড  তৈরি করে। আবার এই সালফেনিক এসিড একাধারে বেশকিছু বিক্রিয়া করে। সব শেষে তৈরি হয় সিন - প্রোপেনেথিয়াল এস -অক্সাইড। এই এসিডের ধরনের কথা বলতে গেলে এই এসিডটি উর্ধমুখী হওয়ায় সরাসরি আমাদের চোখে গিয়ে জায়গা নেয়। পেঁয়াজ এমন এক উদ্ভিদ যার ভেতরে থাকা পদার্থ শুধু বিক্রিয়া আর বিক্রিয়াই করতে থাকে। প্রোপেনেথিয়াল এস -অক্সাইড এই এসিডটি চোখের জলের সাথে আবার বিক্রিয়া করে। যখন এসিডটি চোখের জলের সাথে বিক্রিয়া করে তখন উৎপন্ন হয় সালফিউরিক এসিড। যেটি আমাদের চোখে জল আনতে সাহায্য করে। মজার ব্যাপার হলো এই যে এ এসিডকে যখন চোখের জলের মাধ্যমে ধুয়ে ফেলে তখনই চোখ দিয়ে জল বের হয় এবং চোখ জ্বলতে থাকে।মানে আসল কথা হলো ব্রেইন জানে সালফিউরিক এসিড কতটা ক্ষতিকর তাই চোখকে নির্দেশ দেয় ভাই তুমি যেভাবেই পারো এই বদমাইসটা অর্থ্যাৎ পেঁয়াজের রসকে তাড়া করো বা মোকাবিলা করো। এখন চোখের তো অস্ত্র বলতে রয়েছে এক অশ্রু। যখনই পেঁয়াজ সালফিউরিক এসিডের সাথে যুদ্ধ করে তখন চোখের অস্ত্র অর্থ্যাৎ অশ্রু বের হয়। 


কি কি উপায়ে পেঁয়াজ কাটলে পানি বের হবে না 

আমরা পেঁয়াজ এবং এসিডের যুদ্ধ জানলাম। এখন জানবো কি কি উপায়ে পেঁয়াজ কাটলে চোখ দিয়ে পানি ঝরবে না। তার আগে একটা কথা বলা দরকার।  আচ্ছা বলেন তো যদি যুদ্ধ সংঘটিতই না হয় তাহলে কি সৈন্য মারা যাবে। উত্তর অবশ্যই হবে না। কারন যুদ্ধ না হলে সৈন্য মারা যাওয়ার তো সম্ভাবনায় নেই। এখন কিভাবে আমরা যুদ্ধ বন্ধ বা বাদ ঘোষণা করতে পারি। আগেই বলে রাখি এখানে কিন্তু পেঁয়াজ এবং চোখের যুদ্ধ হচ্ছে। তাই পেঁয়াজ ভাবলো চোখে আক্রমন করবে কিন্তু চোখ বলল না যুদ্ধ করবে না সে। কিন্তু পেঁয়াজ কথা না শুনেই আক্রমন চালায়। তখন চোখ সুরক্ষা নীতি অনুসরন করে, হেলমেট, সাতাঁরের চশমা পড়ে নিলো। যেকারনে চোখে কোনো এসিড প্রবেশ করলো না। চোখ দিয়ে জলও বের হলো না। একই সাথে চোখ পেয়াঁজগুলোকে ফ্রিজ বা জলের মধ্যে অনেকক্ষন চুবিয়ে রাখলো এবং পেয়াঁজের ঝাঁঝালো ভাবটা কমে গেল। গল্পের মাধ্যমেই আমরা দেখতে পেলাম চোখ দিয়ে জল কিভাবে বন্ধ করবো পেঁয়াজ কাটার সময়। 

চশমা পরিধান করে চোখের জল আসা বন্ধ করা 


পেয়াঁজ সম্পর্কিত কিছু তথ্য 

বাংলাদেশের পেয়াঁজগুলোতে সাধারনত এলিসিনের মাত্রাটা বেশি থাকায় এর ঝাঁঝালো ভাবটা বেশি থাকে। তবে এই ঝাঁঝালো ভাবটাই আমাদের রোগপ্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। পেয়াঁজে ভিটামিন সি,বি, পটাশিয়াম থাকে। পেয়াঁজে  ৮৫% পানি থাকে। এছাড়াও পেয়াঁজে কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার পাওয়া যায়। পেয়াঁজে খোসা ছাড়ানোর পরেই যে হালকা নীল বা বেগুনি রঙের আস্তরন থাকে যেটাতে থাকে প্রচুর পরিমাণ এন্টি অক্সিডেন্ট।। 

মন্তব্যসমূহ