শ্রমিক এবং শ্রমশক্তি নিয়ে আলোচনা।

 

শ্রমিক বা Labour 

শ্রমিক হলো একজন ব্যাক্তি যে কি না নিজের শ্রমের  বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখে। শ্রমিক সাধারনত শ্রম দিয়ে থাকে যাকে আমরা শ্রমশক্তির অংশ বলতে পারি। শ্রমিক উৎপাদনের অন্যতম বা প্রাথমিক  উপাদান হিসেবে কাজ করে থাকে। শ্রমিক কোনো কিছু উৎপাদন বা সেবা নিশ্চিত করে থাকে। 


শ্রমিকের প্রকারভেদ 

শ্রমিক বললে প্রথমেই আমাদের মাথায় চলে আসে রাস্তার ধারে বা কোনো নির্মানাধীন ভবন এ রড সিমেন্ট, বালু নিয়ে কাজ করা  মানুষদের। কথা সত্যি তবে একটা কিন্তু রয়েছে। কারন তাদের পাশাপাশি যারা তৈরি করা ভবনে কাজ করে তারাও শ্রমিক। কি বিশ্বাস হলো না? হবে একটু অপেক্ষা করতে হবে। 

আমরা সজ্ঞার মাধ্যমে জানতে পারি কারা শ্রমিক এখন দেখবো প্রকারের মাধ্যমে। 

শ্রমিকদের মূলত বিপরীতধর্ম ২টি বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়।


১.শারীরিক এবং মানসিক শ্রমিক: 

শারীরিক শ্রম দিয়ে যারা অর্থ উপার্জন করে থাকে তাদেরকে শারীরিক শ্রমিক বলতে পারি। যেমনঃ রিক্সাচালক,কুলি,মুজুর,কামার,মুচি,নির্মানশ্রমিক ইত্যাদি। 

আর মানসিক শ্রমিক হলো, যারা মেধা ও মননের মাধ্যমে সেবা দিয়ে অর্থ উপার্জন করে। যেমনঃ আইনজীবি,চিকিৎসক, শিক্ষক, প্রকৌশলী ইত্যাদি। 


২.দক্ষ এবং অদক্ষ শ্রমিক:

 দক্ষ শ্রমিক হলো তারাই যাদের রয়েছে বিশেষ কোনো জ্ঞান, প্রশিক্ষণ এবং সক্ষমতা যার মাধ্যমে শ্রম দিয়ে থাকেন। যেমনঃ প্রকৌশলি,চিকিৎসক,বিজ্ঞানী ইত্যাদি। 

 অপরদিকে অদক্ষ শ্রমিক হলো তারা যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, কোনো বিষয়ে বিশেষ দক্ষতা নেই এবং শুধু মাত্র শরীরের বল প্রয়োগ এর মাধ্যমেই কার্য সম্পাদন করে অর্থ উপার্জন করে।যেমনঃ দিনমজুর, কুলি,রিক্সাচালক ইত্যাদি। 


৩.উৎপাদনক্ষম এবং অনুৎপাদক শ্রমিক:

 উৎপাদনক্ষম শ্রমিক বলতে সেই শ্রমকে যা পণ্যের নিট মূল্য যোগ করে। অর্থ্যাৎ পণ্য উৎপাদন করে দেশীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখে। 

 এর বিপরীতপক্ষই হচ্ছে অনুৎপাদক। মুলত এইভাবে এটাকে পরিমাপ করা হয় না। 

 জনৈক একজন প্রফেসরের মতে উৎপাদনক্ষম এবং অনুৎপাদক শ্রমিকে শারীরিক বা মানসিক শ্রমের উপর ভিত্তি করে মাপা হয় না বরং এটাকে মাপা হয় শ্রমিকের চাহিদার উপর। অর্থ্যাৎ যে শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে সেটাকে উৎপাদনক্ষম এবং যে শ্রমিকের চাহিদা নেই সেটাকে অনুৎপাদক শ্রমিক বোঝানো হয়। 


অর্থনৈতিকভাবে সক্রীয় জনসংখ্যা  (Economically active population) : যে সকল জনসংখ্যা অর্থের বিনিময়ে কাজ করে  দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখে  তাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে সক্রিয় জনসংখ্যা বলে। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে যে যারা কাজ করতে চায় কিন্তু পায় না তারা কি?

তারাও সক্রীয় তবে বর্তমানে হয়তো কাজ পাচ্ছে না কিন্তু কাজ করতে ইচ্ছুক। পরবর্তী একটা সময়ে তারা কাজ পাবে এরকম সম্ভাবনা যাদের রয়েছে তারাই এর অন্তর্ভুক্ত। এটা শ্রমশক্তির আওয়াভুক্ত। 


অর্থনৈতিকভাবে নিস্ক্রিয়  জনসংখ্যা  (Economically unactive population): নিষ্ক্রিয় জনসংখ্যা তারাই যারা বর্তমানে কাজ করতেছে না এবং ভবিষ্যতে করার কোনো মনমানসিকতা নেই। 



শ্রমশক্তি কি জানতে হলে আগে জানা দরকার শ্রম কি । শ্রম বলতে আমরা সাধারনত পরিশ্রমকে বুঝায়। কিন্তু শ্রম এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। শ্রম কাজ এবং লক্ষ্য ভেদে বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। যেমন আমরা যখন শারীরিক শ্রম দিয়ে শরীরের ঘাম ঝরায় হতে পারে কেউ সকালে বা বিকেলে হাটতে পছন্দ করে,কেউ বা বাগান পরিচর্যা করে,কেউ আবার জিমে গিয়ে শরীরের গঠনতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করে।এগুলো হচ্ছে কায়িক শ্রমের উদাহরণ। 

আবার যদি বলি মেধাশ্রম কি, উদাহরণ দিয়ে বললে বিষয়টি সহজভাবেই বুঝতে পারবো যে কাজে কায়িক শ্রম না দিয়ে শুধু মেধা বা ব্রেইনটাকে কাজে লাগানো হয় সেটাই হচ্ছে মেধাশ্রম। 

এখন যদি বলি পরিশ্রম কি, তাহলে বলতে হবে পারিশ্রমিকের আশায় যখন কোনো ব্যাক্তি নিজের শ্রম দিয়ে কোনো কিছু তৈরি করে বা উৎপাদন করে তখন তাকে পরিশ্রম বলা হয়ে থাকে। 

আশা করছি শ্রম নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন নেই। 


শ্রমশক্তি বা Labour force কি? 

শ্রমশক্তি সেসকল লোকজন বা মানুষের সমষ্টিকে বুঝায় যারা কাজ করার /শ্রম দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। তাদের মধ্যে কাজ করার/শ্রম দেয়ার জন্য যতটুকু সক্ষমতা থাকা দরকার তাদের মধ্যে ততটুকু উপাদান রয়েছে।  এখন হতে পারে কেউ কাজ করছে বা শ্রম দিচ্ছে  আবার হতে পারে কেউ কোনো কারনে শ্রম দিচ্ছে না বা কাজ করতেছে না। কিন্তু তারা দুইজনই শ্রমশক্তির অন্তর্ভুক্ত। 

মন্তব্যসমূহ