কোনটা উচিত কোনটা অনুচিত |
পৃথিবীতে যদি নিকৃষ্টতম এবং ঘৃণীত কাজ থেকে থাকে তাহলে আত্মহত্যা তারমধ্যে একটি। যদি প্রশ্ন করা হয় মানুষ আত্মহত্যা কেন করে? আপনি কি বলবেন? হয়তো এটা বলবেন বেঁচে থাকার ইচ্ছে থাকে না তাই মানুষ আত্মহত্যা করে। হ্যা মানুষ এজন্যই এই ঘৃণীত কাজটি করে। তাহলে আপনি বলুন তো পৃথিবীতে মানুষ কেন আসে, কার আদেশে আসে? আপনি হয়তো বলবেন সৃষ্টিকর্তা পাঠায় সেজন্য মানুষ পৃথিবীতে আসে আবার নির্দিষ্ট সময় পর তার আদেশেই চলে যায়।হ্যা আপনি ভালো বলেছন। কারন প্রতিটি প্রানীই সৃষ্টিকর্তা দ্বারাই তৈরি। তার আদেশেই আসেন এবং যান।কিন্তু কথা হলো যে আপনাকে পাঠালো তাকে আপনি গুরুত্ব না দিয়ে তার আদেশ ছাড়াই কেন নিজের জীবন শেষ করে দিতে চাচ্ছেন। তিনি কি আপনাকে বলেছে আত্মহত্যা করতে। অবশ্যই না। তাহলে আপনি কেন এই কাজটি করবেন। কিসের জন্য করবেন। আপনি যদি ভেবে থাকেন যে আপনি নিজেকে শেষ করে দিলে সবকিছুর সমাধান হবে তাহলে আপনি ভূল ভেবেছেন। একটা মানুষ যখন পথ ভূল করে হাটতে থাকে তাহলে সেখানে শুধু ভূলই করতে থাকে কারন সে ভাবে সে হয়তো সঠিক পথেই হাটতেছে। কিন্তু আদৌ তা নয়। একটাবার নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি কে? কেনই বা আপনি নিজেকে শেষ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। বিশ্বাস করেন আপনি শুধু মাত্র উপরে কষ্ট আর যন্ত্রণাটার জন্যই এই সিদ্ধান্তটা নিচ্ছেন। সাময়িক আবেগ আপনাকে শেষ করে দিচ্ছে। আপনি সেটা নিজেও জানেন না। আপনি ভাবতেছেন এই জীবন রেখে কি লাভ, এত ঝামেলা, এত সমস্যা আর ভালো লাগে না। শেষ করে দেয় তাহলেই সবকিছু সমাধান না। আপনি ভূল ভেবেছেন। আপনি যাকে হত্যা করতে চাচ্ছেন তিনি আপনি নন। আমাদের শরীর একটা বাগান আর এই বাগানটির মালিক হলেন সৃষ্টিকর্তা আমরা হলাম মালি, শুধু পরিচর্যা করাই আমাদের কাজ। এখন আপনিই ভাবেন মালি হয়ে কি আপনার ফুল ছেঁড়ার অধিকার আছে? না সেটা আপনার নেই। কারন বাগানটি আপনার নয়। ঠিক তেমনি শরীরটা আপনার নয়। সাময়িক সময়ের জন্য পেয়েছেন। আপনার গর্ববোধ করা উচিত কারন আপনি একজন মানুষ হয়ে জন্মেছেন। লক্ষ্য করুন কত জীববৈচিত্র রয়েছে এবং তাদের সবকিছু কতটা আলাদা। তাদের নেই কোনো সঠিক জীবনযাপন পদ্ধতি নেই কোনো শৃঙ্খলা। আর আমরা মানুষ হয়েও মানুষর জীবনের মর্যাদা দেয় না। দাঁত থাকিতেও দাঁতের মর্ম বুঝেও বুঝি না। আমাদের সমাজে প্রায়ই দেখা যায় সম্পর্কঘটিত বিষয় নিয়ে অনেক ছেলেময়েই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আপনি কেন আত্মহত্যা করবেন? আপনার বিরহ ঘটেছে; প্রিয় মানুষটি চলে গিয়েছে সেজন্য?
আপনি হলেন পৃথিবীর সবচেয়ে বোকা প্রাণী। যে যাবার সে তো চলে যাবেই, সে পারলে আপনি কেন পারবেন না!? আপনি যদি নিজেকে শেষ করে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তাহলে আমি বলবো আপনি নিজেকেই ভালোবাসেন না তাহলে অন্যকে কেমন করে ভালোবাসলেন। যে ব্যাক্তি নিজেকে ভালোবাসে না সে অন্যকাউকে ভালোবাসবে এটা সন্দিহান।
আপনি এটা ভাববেন না যে আপনি আপনার জীবনের জন্য আপনি শুধুমাত্র একাই। আপনার সাথে রয়েছে আপনার পরিবার। আচ্ছা এমন কি কখনো শুনেছেন নিজের বাবা মা'র জন্য কেউ মারা গিয়েছেন? শুনেন নি। তাহলে যারা আপনাকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন তাদের জন্য আপনার কখনো এমন করতে ইচ্ছে করলো না অথচ ক্ষনিকের পরিচয়ে আপনি নিজেকে জড়িয়ে ফেললেন এবং দিনশেষে আপনি তার জন্য নিজেকে শেষ করে দিচ্ছেন এটা কি কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হবে? ভেবে দেখুন। আপনি নিজেকে শেষ করে দিচ্ছেন অন্য কারোর জন্য কিন্তু আপনি তাদের কথাটা একবারও ভাববার প্রয়োজন বোধ করলেন না যারা আপনাকে এতটা মায়া, ভালোবাসা, আদর,স্নেহ দিয়ে লালন পালন করলো। প্রতিটি সন্তান তার বাবা মা'র প্রতি ঋণী।আর সন্তানরা সেই বাবা মা'র মুখের দিকে তাকায় না। এটা রীতিমতো তাদেরকে ঠকানো। আপনাকে ঘিরে আপনার বাবা মা'র একটি স্বপ্ন আছে। তারা কষ্ট করে বড় করে তুলছেন যাতে আপনি তাদের শেষ সময়টা পাশে থাকতে পারেন। বলতে গেলে একটি খুঁটির মতো আপনি। আপনি কি ভেবেছেন আপনি আত্মহত্যা করলে তারা ভালো থাকবে। আপনি যে ধর্মেরই হন না কেন যদি আস্তিক হয়ে থাকেন তাহলে পরকালে অবশ্যই বিশ্বাসী। আর এই ঘৃণীত কাজটি করার পর আপনি না ভালো থাকবেন পরকালে একই সাথে বাবা মা' কেও কষ্ট দিবেন তারাও ভালো থাকবে না।
এটা তো অন্যায়। হ্যা মেনে নিলাম আপনার এখন খারাপ সময় যাচ্ছে আপনি কোনো কিছুতেই ভালো নেই। তার মানে এই নয় আপনার এই সময়টা পরিবর্তন করতে পারবেন না। আপনি অবশ্যই পরিবর্তন করতে পারবেন। হ্যা অবশ্যই পারবেন যদি আপনার মনে সাহস এবং আত্মবিশ্বাস থাকে। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। আপনি এটা বিশ্বাস করুন যে আপনি পারবেন। অন্ত্যত বাবা মা' মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও আপনাকে পারতে হবে। প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনো সমস্যার মধ্যে দিয়েই যায়। কিন্তু তারমানে এই না আপনি হেরে গেলেন। আপনাকে লড়াই করতে হবে নিজের সাথেই।
আপনি একাকীত্ব ফিল করবেন না তখনই যখন আপনিই আপনার সঙ্গী থাকবেন। কিন্তু আমরা তো এটা ভাবি আমার কেউ নেই ভালো বন্ধু নেই, একটা কাছের মানুষ নেয়। এগুলো মূল্যহীন কথা। কারন যে মানুষটি নিজেকে সময় দেয় সে কখনো এটা মনে করে না সে একা। রবী ঠাকুর বলেছেন,য"দি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে"।
জীবনটা সুন্দর তখনই হবে যখন আপনি নিজেকে সুন্দর করে গড়ে তুলবেন। মনে রাখবেন জীবনটা আপনার পাওয়া সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে একটি মূল্যবান উপহার। জীবন একটি যুদ্ধ ক্ষেত্র এখানে প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য নিজের সাথে নিজের লড়াই করতে হয়। আর যে নিজের সাথে নিজেকে লড়াই করিয়ে টিকিয়ে রাখতে পারবে সেইই জয়ী হবে।
কোনো পরিস্থিতিতেই নিজেকে দূর্বল ভাববেন না সবসময়ই মনে রাখবেন আপনার জন্য আপনিই উত্তম। নিজেকে সময় দেন। নিজেকে নিয়ে ভাবুন।স্বপ্ন দেখুন নিজেকে নিয়ে। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন হ্যা আপনিই সবার সেরা। আপনি পারবেন।
সমস্যাটাকে সমস্যা না ভেবে সমাধান বের করে তার মোকাবিলা করুন। দেখবেন আপনি স্বার্থক হবেন।
তারপরও যদি আপনার মনে হয় আত্মহত্যাই সমাধান তাহলে আপনি মানুষ নন। আপনি যুদ্ধের ময়দান থেকে পালানো একটা সৈনিক। আপনার জন্য জীবন নয়। আপনি ব্যর্থ। ভালো থাকুন এবক নিজেকে ভালো রাখুন। নিজেকে ভালোবাসুন। সেই পরিমান ভালোবাসুন যে পরিমাণ ভালোবাসলে সৃষ্টিকর্তাকে পাওয়া যায়।
সৃষ্টিকর্তা আপনার সহায় হোক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন