"ক্রিকেট " যার অর্থ হলো ঝি ঝি পোকা। কিহ্ অবাক হলেন তো! অনেকেই জানে ক্রিকেট অর্থ ঝি ঝি পোকা এবং ক্রিকেট মানে হলো একটি খেলার নাম। তবে দুটোই সঠিক।
এখন কথা বলবো ক্রিকেট খেলা নিয়েই। তাহলে চলুন জেনে আসি ক্রিকেট খেলার ইতিহাস থেকে শুরু করে বর্তমান এ খেলার অবস্থা। ক্রিকেট হলো বিশেষ্য পদ। যার বাংলা অর্থ দাড়ায় ক্রীড়াবিশেষ বা ব্যাটবল খেলা।এবার আসুন আরেকটু জেনে নেই, ইংরেজি CRICKET শব্দটি সাত অক্ষরের। এবং এই সাত অক্ষরের আলাদা ভাবে সাতটি অর্থ আছে। একটু বিশ্লেষণ করা যাক তাহলে!
প্রথম অক্ষর C যার দ্বারা বুঝায় Concentration এর অর্থ হলো একাগ্রতা বা মনোযোগ। ক্রিকেট খেলতে গেলে একাগ্রতা থাকতে হবে দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়দের বিশেষ করে একজন ব্যাটসম্যানের, যখন সে একটি বল মোকাবেলা করবে।
দ্বিতীয় অক্ষর R এর দ্বারা বুঝায় Regularity -অর্থ হলো নিয়মানুবর্তিতা। প্রত্যেক খেলায়ই নিয়মানুবর্তিতা থাকা খুবই প্রয়োজন। যখন একজন প্লেয়ার মাঠে খেলতে নামে তখন তার প্রতিদিন খেলার জন্য অনুশীলন করতে হয়।
এরপর আসি I নিয়ে যার দ্বারা বুঝায় Intelligence অর্থ বুদ্ধিমত্তা। ক্রিকেট মানেই হচ্ছে বুদ্ধির খেলা। প্রতিপক্ষ যদি ব্যাটসম্যান হয় তখন বোলার আর অধিনায়কের বিচক্ষণ বলে বুদ্ধির দ্বারাই খেলায় জয় পাওয়া সম্ভব।
তারপরের অক্ষর C হলে Courage যার অর্থ হলো সাহস। একজন বোলারের বল মোকাবিলা করার জন্য ব্যাটসম্যানদের সাহসের দরকার হয় আর সেই বোলার যদি শোয়েব আকতার, ডেল স্টেইনদের মত ফাস্ট বোলার হয়। ঠিক তেমনি একজন সাহসী ব্যাটসম্যানের বিপক্ষেও কোনো বোলার ভালো বল করতে পারবে না।
K হলো Keenness যার অর্থ দাড়ায় বিচক্ষণতা। একটি খেলায় জয় পেতে চাইলে, নিজের সর্বত্র দিয়ে চেষ্টা করতে হয় দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়দেরকে, বিশেষ করে ফিল্ডিং এ।
এরপর আসি E নিয়ে যা হলো Energy কে নির্দেশ করে, অর্থ হলো শক্তিমত্তা। ক্রিকেট খেলতে গেলে অবশ্যই প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হ আর সেটা যদি টেস্ট খেলা হয় তাহলে ত কথাই নাই, ২-৩ দিন একটানা বোলিং, ব্যাটিং কিংবা ফিল্ডিং।
সপ্তম অক্ষর এবং সর্বশেষ অক্ষর হলো T যা নির্দেশ করে Temperament যার অর্থ হলে সহনশীলতা।ক্রিকেটকে বলাই হয় ভদ্রলোকের খেলা তাই এখানে মাথা গরম করলেই মনের একাগ্রতা নষ্ট হয়ে যায়। ক্রিকেট খেলতে গেলে সহনশীলতা বজায় রাখতে হয়।
ক্রিকেটের প্রতিষ্ঠাতা ঃ-
১৯০৯ সালে ইংলেন্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ও অস্ট্রেলিয়া মিলে নামকরণ করেন 'ইম্পেরিয়াল ক্রিকেট কানফারেন্স' যার স্থায়িত্ব ছিলো ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত। এরপর ১৯৬৫ থেকে১৯৮৯ সাল পর্যন্ত নামকরণ বদলে হয় 'ইন্টারনেশনাল ক্রিকেট কনফারেন্স'। এবং ১৯৮৯ সালে নাম পরিবর্তন করে তৈরি হয় "ইন্টারনেশলান ক্রিকেট কাউন্সিল " যা বর্তমানে এই নামেই রয়েছে।
সংস্থাটি পরিচালনা শুরু হয় ১৯০৯ সাল থেকেই, তখন এর সদর দপ্তর ছিলো যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। পরবর্তীতে ২০০৫ সাল থেকে বর্তমানে এর সদর দপ্তর হলে দুবাই,সংযুক্ত আরব আমিরাত।
বর্তমানে এর সদস্যপদ ১০৫* টি দেশ। আইসিসিতে দুই স্তরবিশিষ্ট সদস্যের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
পূর্ণাঙ্গ সদস্যভূক্ত ঃ-
১২টি ক্রিকেট পরিচালনা বোর্ডের দলগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণের অধিকারী। সহযোগী সদস্যভূক্ত ৯২টি পরিচালনা বোর্ডের স্থায়ী প্রতিষ্ঠান রয়েছে ও ক্রিকেট খেলা আয়োজন করে থাকে; কিন্তু তারা পূর্ণ সদস্যের পর্যায়ে পড়ে না।সাম্প্রতিককালে আয়ারল্যান্ড এবং আফগানিস্তান আইসিসির পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ অর্থাৎ টেস্ট মর্যাদা পেয়েছে।১২টি পূর্ণ সদস্য দেশ হলো:
অস্ট্রেলিয়া
বাংলাদেশ
ইংল্যান্ড
ভারত
নিউজিল্যান্ড
পাকিস্তান
দক্ষিণ আফ্রিকা
শ্রীলঙ্কা
ওয়েস্ট ইন্ডিজ
জিম্বাবুয়ে
আফগানিস্তান
আয়ারল্যান্ড।
প্রতিযোগিতাঃ-
আইসিসি বিভিন্ন ধরনের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট, একদিনের আন্তর্জাতিক ও টুয়েন্টি২০ ম্যাচ আয়োজন করে।
ক্রিকেট ম্যাচ তিনটি ফরমেটে খেলা হয়
টেস্ট,ওয়ানডে সিরিজ,টি-টুয়ান্টি সিরিজ। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়ানশিপ খেলা হয় আইসিসির পূর্ণ সদস্য পাওয়া দেশ গুলোর মধ্যে। পূর্ণ সদস্য দেশ গুলো, আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ান্স ট্রফি এবং টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে পারে। বাকি সদস্য দেশ গুলো টেস্ট ক্রিকেটে আইসিসি ইন্টার কন্টিনেন্টাল কাপ, ওয়ানডে বিশ্বকাপের এর বাছাই পর্ব এবং টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপ ম্যাচের বাছাই পর্ব খেলতে পারে। যুব কিশোরদেরও রয়েছে অনুর্ধ ১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট ম্যাচ।এগুলো ত গেলো পুরুষদের ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন। পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও ক্রিকেটে অর্জন কিন্তু কম নয়! নারী ক্রিকেট ম্যাচ দুইটি ফরমেটে খেলা হয় , একদিনেই ম্যাচ ও টি টুয়েন্টি ম্যাচ। নারীদের চ্যাম্পিয়ান্স ট্রফি, ওয়ানডে বিশ্বকাপ এবং টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপ ম্যাচ এর আয়োজন থাকে। যুব নারীদের জন্য রয়েছে অনুর্ধ ১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট যেখানে খেলা হয় টি-টুয়ান্টি ফরমেটে।
নারী ক্রিকেট প্রতিষ্ঠাতাঃ-১৯৫৮ সালে মহিলাদের ক্রিকেট সংস্থারূপে আন্তর্জাতিক মহিলা ক্রিকেট কাউন্সিল গঠন করা হয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গনে মহিলাদের ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে ইংল্যান্ড,অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকা - এই চারটি দেশের মধ্যেকার ক্রিকেট খেলা তখন প্রচলিত ছিলো । পরবর্তীতে ২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক মহিলা ক্রিকেট কাউন্সিলকে আইসিসি'র সাথে একীভূত করা হয়েছে। এরফলে নারী ক্রিকেট সংস্থারূপে ক্রিকেটের মানোন্নয়নে সহযোগিতা ও পরিচালনা করা আরো সহজতর হয়ে দাড়ায়।
ক্রিকেট খেলাটি ফুটবলের চেয়ে একটু বেশিই সময় ধরে খেলা হয়, তবুও যেন ক্রিকেটের দর্শক স্থান পরিপূর্ণ থাকে। কারন হলো ক্রিকেট একটি মজার খেলা, যেখানে প্রতিটা বল এ বল এ আনন্দের অনুভূতি নেয় খেলা প্রেমিরা, এই বুঝি এই বলে আউট হলে ব্যাটসম্যান বা কেউ মনে করে এই বুঝি একটা ছক্কা হবে। বোলারের একটি ভালো বল প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে দিতে পারে। ক্রিকেট খেলা সারাবিশ্বে অন্যতম স্থান দখল করে নিয়েছে। আর যদি বলি বাংলাদেশের কথা তাহলে সেটা যদি বাংলাদেশ বনাম অন্য কোনো দেশের সাথে ম্যাচ আয়োজন হয়, দেখাই যায় ঢাকা তথা মিরপুর শে রে বাংলা স্টেডিয়ামে ক্রিকেট প্রেমীদের উল্লাস। নিজের দেশের জন্য সর্বোচ্চ সাপোর্ট দেওয়া দর্শক শুধু গ্যালারিতে নয়, বাড়ীতে রাস্তায়, দোকানে, কিংবা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে তাদের উচ্ছাস।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন