বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস এ যেন এক সোনার হরিণ। ছোট কিংবা বড় সবারই লক্ষ্য এখন বিসিএস ক্যাডার হওয়া। উচ্চ মাধ্যমিক এ পড়াটা ছেলেটাও বিসিএস ক্যাডার হবে এই স্বপ্ন দেখে। এটা অবশ্যই ভালো। অংকুর থেকেই যত্ননিলেই মিলবে রুষ্টপুষ্ট গাছ। বাবা মা আত্মীয় স্বজন সবারই ইচ্ছে সন্তানটিকে বিসিএস ক্যাডার বানাবো। এতে সন্তান কি হতে চাই সেটা দেখার বিষয় নয়। কিছুদিন আগেও বাবা মা স্বপ্ন দেখতো সন্তানকে ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার বানাবে। কিন্তু সেটা এখন আর কেউ বলে না। সন্তানটিও বলে না ডাক্তার ইন্জিনিয়ার হবে। কারন তার মাথায় এখন ঘুরে বিসিএস নামক কৌতূহল।
আজকের এসময়ে যদি ঈশ্বরী পাটনি বেঁচে থাকতো
তাহলে হয়তো দেবী অন্নপূর্ণার কাছে বর চাইতো"আমার সন্তান যেন বিসিএস ক্যাডার হয়। কারন যখন যে যুগ। তখন সেটারই প্রাধান্য পায়। ঈশ্বরী পাটনি সময়কালে দুধে ভাতে থাকাটাই ছিলো বড় পাওয়া। কারন তখন যে দুধে ভাতে থাকতে পারবে সেইই ধনী। বিসিএস ক্যাডার হওয়াটা সত্যিই ভাগ্যের। আর এর কদরটাও গগনচুম্বী। কদরটা গগনচুম্বী হওয়াটা কি স্বাভাবিক নয়? অবশ্যই স্বাভাবিক। কেন নয়। বাংলাদেশের প্রথম শ্রেনীর চাকুরি এটা। সুযোগ সুবিধা, অর্থনৈতিক সাপোর্ট , ক্ষমতা, বাসস্থান সব দিক থেকেই ভালো।
প্রতিবছর ৩-৪ লাখ পরীক্ষার্থী বিসিএস পরীক্ষা দেয়। লোকবল নেয় ২০০০ এর আশেপাশে। যা তুলনায় অনেক কম সংখ্যক নিয়োগ। সুবিধা যার বেশি সেখানে সবার ইচ্ছে টাও তো বেশি।
বিসিএস পরীক্ষার যোগ্যতা নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হবে আপনি কি অনার্স পাস করেছেন? যদি করে থাকেন সু্যোগটি আপনিও পাবেন পরীক্ষার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করার।
আচ্ছা এটাও বাদ দিলাম আপনি কি অর্নাস বা সম্মানের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছেন কিন্তু রেজাল্ট বের হয় নি?যদি উত্তর হ্যা হয়। চিন্তার কোনো কারন নেই কারন আপনিও পরীক্ষা দিতে পারবেন।
আপনি আপনার সিজিপিএ বা পয়েন্ট নিয়ে চিন্তা করার কোনো কারন নেই। আপনি পাশ করে নুন্যতম একটি পয়েন্ট নিয়ে পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে পারবেন।
মজার একটি বিষয় হলো কোনো শিক্ষার্থী দিনে ১ ঘন্টা পড়ুক বা না পড়ুক তার স্বপ্ন বিসিএস ক্যাডার হওয়া।
জব সিকিউরিটির দিক থেকে বলতে গেলে বিসিএস চাকুরি অনেক বেশি সিকিউর। সকল ধরনের নিরাপত্তা পাওয়া যায় এখান থেকে। সেটা হতে পারে সামাজিক,অর্থনৈতিক যেকোনো বিষয়ে। শুধু আপনি নন আপনার পরিবারও এর ভাগিদার। কারন আপনার পাশাপাশি তারাও অনেক সম্মান অর্জন করে ফেলবে।
ক্যাডার এর মধ্যে প্রথম সারির দিকে ফরেন ক্যাডার,প্রশাসন, কাস্টম, পুলিশ,কর, আনসার,শিক্ষা ইত্যাদি। বর্তামানে ২৬ টি ক্যাডার রয়েছে। আপনি যেকোনো ক্যাডারেই ঢুকেন না কেন সবগুলোর গ্রেড একই। শুধু মাত্র কার্যাবলির দিক থেকে ভিন্ন।
আপনি যদি মাঠপর্যায়ে থেকে দেশের সেবায় অংশগ্রহণ করতে চান তাহলে আপনার উচিত বিসিএস ক্যাডার হওয়া।কারন বিসিএস ক্যাডাররা মাঠ পর্যায়ে কাজ করে থাকেন। দেশেরস্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ মতামত,সিদ্ধান্ত তারা নেওয়ার অধিকার রাখে। সর্বোপরি বিসিএস আপানার সাথে আলাদা মাত্রা যোগ করবে।
একটি সরকারী চাকুরি পাওয়া সবারই চাওয়া। হোক সেটা ১ম শ্রেনী হোক সেটা ২য় শ্রেনী। যাতে নিজের নামের সাথে সরকারি চাকুরিজীবি টাইটেলটি যোগ করা যায়। কারন বুঝেনই তো মেয়ের বাবা আবার সরকারী চাকুরিজীবি জামাইটিই খোঁজে। ভালো বউ পেতে হলে আপনাকে সরকারি চাকুরি পেতেই হবে। এখন বলতে পারেন তাই বলে কি সরকারি চাকুরিজীবী ছাড়া ভালো বউ পাবো না?
কে বলছে পাবেন না। অবশ্যই পাবেন। তবে কড়ি থাকতে হবে। এমন চাকুরি থাকতে হবে যেখানে থাকবে না মেয়ের বাবার ভয়। যে জামাইয়ের চাকুরি চলে যায় কি না? মেয়ের চাহিদা পূরণ করতে পারবে তো?, সংসার চালাতে পারবে তো? ইত্যাদি কৌতূহল কাজ করবে।
অথচ সরকারি চাকুরিজীবী পাত্র পেলে এটাও জিজ্ঞেস করবে না জামাই দেখতে কেমন?
পরিবার কেমন? ইত্যাদি ইত্যাদি। কি বুঝলেন তো সরকারি চাকুরি কি জিনিস?
হ্যা এটাই সরকারি চাকুরি।
অনেক তো বিসিএস নিয়ে কথা হলো চলুন একটু এর বাহিরে গিয়ে কথা বলি। কারন সবাই তো আর বিসিএস ক্যাডার হবেন না। সবাই যদি বিসিএস ক্যাডার হয় তাহলে অফিসের সহায়ক কে হবে, কে প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক, কে হবে ব্যবসায়ী,কে হবে উদ্যোক্তা?
আমাদের শিক্ষামন্ত্রী একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এটা বলেন যে, "বিশ্ববিদ্যালেয়র লাইব্রেরি গুলো যেন বিসিএস এর প্রস্তুতিকেন্দ্র না হয়" তার কথাটি বলার কারন হলো বিসিএস হতে পারে অনেক সম্মানের কিন্তু এর মধ্যে সৃজনশীলতা নেই বললেই চলে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞান চর্চার মুক্তমঞ্চ। এখানে আপনার প্রতিভাকে বিকশিত করতে পারবেন।
করতে পারবেন গবেষণা। যার মাধ্যমে দেশে তো বটেই দেশের গন্ডির বাইরেও আপনার নামডাক ছড়িয়ে পড়বে।
এখন সিদ্ধান্ত আপনার আপনি কি হতে চান।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন